চুরির অপবাদে তিন নারীর চুল কেটে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল

 চুরির অপবাদে তিন নারীর চুল কেটে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল





চুরির অপবাদে তিন নারীর চুল কেটে নৃশংস নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল: জনমনে তীব্র ক্ষোভ

আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এপ্রিল ২০২৫:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকায় চুরির অভিযোগ তুলে তিন নারীকে চরমভাবে লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে ওই নারীদের মাথার চুল কেটে দেয়, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং পরবর্তীতে পুরো ঘটনা ভিডিও আকারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, রবিবার রাত ৮টার দিকে তিন নারী ও একটি শিশু সড়ক বাজারের এক দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ওই এলাকার “চাঁদপুর অ্যালুমিনিয়াম স্টোর” নামক দোকানের মালিক সুমন দাস ও তার সহযোগী মো. রাব্বি তাদের চোর সন্দেহ করে প্রকাশ্যে চুল কেটে দেন এবং প্লাস্টিক পাইপ ও লোহার রড দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করেন। শিশুটিকে সাথেই দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায়, কিন্তু তার কান্নাও নির্যাতকদের হৃদয় গলাতে ব্যর্থ হয়।

এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। ভিডিওতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী নারীরা বারবার নির্দোষ দাবি করলেও অভিযুক্তরা তাদের কথা না শুনে গায়ের বোরকা খুলে ফেলে এবং প্রকাশ্যে অপমান করে। এ ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং ঘটনাটিকে "মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও মধ্যযুগীয় বর্বরতা" বলে অভিহিত করেছে।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হলে তারা দ্রুত অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত সুমন দাসকে গ্রেফতার করে। আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এটি একটি জঘন্য অপরাধ। আমরা ভিডিও ফুটেজ ও স্থানীয়দের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

তিনি আরও জানান, ঘটনায় আরও যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার নারীদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। অনেকেই লিখেছেন, “চুরির অভিযোগ থাকলেও কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার নেই। এ ঘটনা আমাদের সভ্যতার লজ্জা।”

এখন পুরো দেশ অপেক্ষা করছে—এই বর্বরতার সঠিক বিচার হবে কিনা, নাকি আরও একটি ঘটনা হারিয়ে যাবে বিচারহীনতার গহ্বরে।



Post a Comment

Previous Post Next Post