জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) সম্প্রতি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভ ও এর প্রেক্ষিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে একটি বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। (জাতিসংঘের প্রতিবেদন: বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, জড়িত নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো : সংবাদ অনলাইন)
🔍 প্রতিবেদনটির মূল বিষয়বস্তু
-
সহিংস দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহিংস উপায়ে বিক্ষোভ দমন করেছে। এতে শতশত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর ওপর জোরপূর্বক বলপ্রয়োগ, নির্বিচারে আটক, নির্যাতন এবং অন্যান্য নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। (জুলাই আন্দোলন নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ)
-
প্রমাণ লোপাট ও তথ্য গোপন: নিরাপত্তা বাহিনী হত্যার প্রমাণ মুছে ফেলতে মরদেহ গোপন বা পুড়িয়ে ফেলেছে, এবং আহতদের চিকিৎসা নথি জব্দ করেছে। ডিজিএফআই, এনএসআইসহ অন্যান্য সংস্থা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করেছে। (ক্ষমতাচ্যুত সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্য গোপন করেছে : জাতিসংঘের প্রতিবেদন | শিরোনাম)
-
ভয়ভীতি ও নির্যাতন: আইনজীবী, সাংবাদিক, ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। ডিজিএফআই সদস্যরা সরাসরি যোগাযোগ করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে।
-
নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত গোলাবারুদ বরাদ্দ: পুলিশের বিশেষ শাখা এবং র্যাবকে গোপনে অতিরিক্ত গোলাবারুদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাদের গুলিবর্ষণের হিসাব সরকারি নথিতে না আসে।
⚖️ জাতিসংঘের সুপারিশ
-
স্বাধীন তদন্ত ও জবাবদিহিতা: জাতিসংঘ ফৌজদারি তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
-
নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কার: পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসহ পাঁচটি খাতে সংস্কারের সুপারিশ করেছে। নির্বাচনী পরিবেশ উন্নয়ন: মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অবাধ ও প্রকৃত নির্বাচনের জন্য একটি নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
-
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করা: কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ, যাতে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় থাকে।
🗣️ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক জেনেভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্য উন্মোচন, নিরাময়, এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।”
বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রশংসা করে বলেন, "গুম, খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আইনের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।”
📌 উপসংহার
এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি মানবাধিকার-সম্মত ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।