বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আগামী সাত মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আগামী সাত মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: সংকটের মধ্যেও সম্ভাবনার খোঁজ
ঢাকা, ২ মে ২০২৫:
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য আগামী সাত মাসকে অর্থনীতিবিদরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। এই সময়ের মধ্যে বাজেট, রিজার্ভ পুনর্গঠন, ঋণ পরিশোধ, মূল্যস্ফীতির চাপ, এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা—সবকিছু মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার সম্মুখীন।
বাজেট ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা: পরীক্ষার মুখে সরকার
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট আগামী জুনে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। এই বাজেট হবে বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজস্ব ঘাটতি, বৈদেশিক সহায়তার অনিশ্চয়তা এবং ব্যয় সংকোচনের প্রেক্ষাপটে সরকারকে এই বাজেট অত্যন্ত কৌশলে সাজাতে হবে।
বাজেটে উৎপাদন ও রপ্তানি খাতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আভাস পাওয়া গেছে, তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষিখাতেও বরাদ্দ বাড়ানোর চাপ রয়েছে।
রিজার্ভ ও ডলার সংকট
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক কমে গেছে। রপ্তানি আয়ের নিম্নগতি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি রিজার্ভ ঘাটতির অন্যতম কারণ। বর্তমানে রিজার্ভ ১৭ বিলিয়নের নিচে অবস্থান করছে, যা আমদানি ব্যয়ের তুলনায় উদ্বেগজনক। আগামী সাত মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর সহায়তা পেতে হলে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে উঠবে।
মূল্যস্ফীতি ও জনজীবন
বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হ্রাসের প্রভাব সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলছে। আগামী মাসগুলোতে এই চাপ আরও বাড়বে কি না, তা নির্ভর করবে বৈশ্বিক বাজার এবং সরকারের মুদ্রানীতি ও আমদানি ব্যবস্থাপনার ওপর।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ
নির্বাচনের পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা কম থাকলেও, বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকি এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। আগামী সাত মাসে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা এবং প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের সংকট বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে ইউরোপ, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নতুন বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। সরকার “এক্সপোর্ট ডাইভার্সিফিকেশন” বা রপ্তানির বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মত
জানা গেছে, অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন আগামী সাত মাস হবে ‘সংযম, কৌশল ও সাহসিকতার পরীক্ষা’। যদি সরকার কঠোর আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে, তাহলে এই সময়কাল পেরিয়ে অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল ভিত্তির দিকে এগোতে পারবে। অন্যথায়, স্থবিরতা ও দীর্ঘমেয়াদি সংকটও ডেকে আনতে পারে।
অর্থনীতির নির্দিষ্ট কোনো দিক নিয়ে আরও বিশ্লেষণ লাগলে Click Here...