সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সংক্রান্ত একাধিক ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ তুলে ধরা হলো:
🇧🇩 বাংলাদেশ সংক্রান্ত ভুয়া খবর
-
শেখ হাসিনার খোলা চিঠি: ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে তার পতনের জন্য দায়ী করেছেন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এমন কোনো চিঠি নেই; এটি একটি ভুয়া খবর।
-
ড. ইউনূসের অসুস্থতা ও পলায়ন: আরও দাবি করা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন এবং পরে ফ্রান্সে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু এই দাবিগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি; ড. ইউনূস সুস্থ রয়েছেন এবং এসব তথ্য ভুয়া।
-
পাকিস্তানি জাহাজে অস্ত্র আনা: ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের একটি সামরিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র নিয়ে এসেছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি একটি বাণিজ্যিক জাহাজ ছিল এবং এ দাবির কোনো ভিত্তি নেই।
🇵🇰 পাকিস্তান সংক্রান্ত ভুয়া খবর
-
পাকিস্তানি এফ-১৬ ভূপাতিত: ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, পাকিস্তানের সব এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সঠিকভাবে হিসাব করা হয়েছে এবং কোনোটি নিখোঁজ নেই, যা ভারতের দাবিকে ভুল প্রমাণ করে।
-
ভুয়া ভিডিও প্রচার: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে রাতের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা যায়। ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, এটি পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে ভারতের হামলার দৃশ্য। তবে অল্ট নিউজ ও বিবিসি ভেরিফাইয়ের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি ২০২৩ সালে ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের সময়ের এবং এর সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো সংঘর্ষের সম্পর্ক নেই।
🛡️ ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ভুয়া খবর প্রতিরোধে সক্রিয় হয়েছে। তারা সংবাদমাধ্যমের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে এবং ফেক নিউজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। পিআইবি ফ্যাক্ট চেক ইউনিট ভুয়া খবর শনাক্ত করে তা খণ্ডন করছে।
এছাড়া, ১০ মে ২০২৫ তারিখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ধরেন এবং প্রমাণসহ তা খণ্ডন করেন।
🔍 উপসংহার
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সংক্রান্ত ভুয়া খবর ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তথ্য যাচাই করে সংবাদ গ্রহণ করা জরুরি। বিশ্বস্ত সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মতামত গঠন করা উচিত।
আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো ভুয়া খবর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, অনুগ্রহ করে জানান।